জাদুঘরে মসলিন পুনরুজ্জীবন: সমস্যা ও সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন।

ঢাকা, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর সকাল ১১:৩০ মিনিটে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে মসলিন পুনরুজ্জীবন: সমস্যা ও সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে । সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৃক পিকচার লাইব্রেরি (বেঙ্গল মসলিন) লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক জনাব সাইফুল ইসলাম। আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট লোকশিল্প গবেষক শ্রী চন্দ্রশেখর সাহা, হস্তশিল্প গবেষক ও লেখক রুবী গজনবী এবং তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ফরিদ উদ্দিন । বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড এর সম্মানিত সদস্য (এসএন্ডএম) জনাব মো. মিজানুর রহমান । প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান জনাব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার । সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. লুৎফুর রহমান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, ২০১৬ সালের আয়োজিত বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর মসলিন প্রদর্শনী সারা বিশ্বে সাড়া ফেলেছিল । জনাব সাইফুল ইসলাম সাহেব মসলিন পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে অগ্রগতির বর্তমান অবস্থার ব্যাপারে আলোকপাত করেন।

 

অনুষ্ঠানে প্রবন্ধক উপস্থাপক জনাব সাইফুল ইসলাম তার ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করেন এবং মসলিনের ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন যদিও অন্যান্য কিছু অঞ্চলে মসলিন উৎপাদিত হত কিন্তু বাংলার মসলিনের চাহিদা ছিল বিশ্বব্যাপী । মসলিনের সাথে দৃকের সংযুক্তির ঘটনাও তিনি জানান । মসলিনের হারানো ঐতিহ্যসহ মসলিনের তথ্য সংগ্রহ কীভাবে করেছেন সে ব্যাপারে জানান । এই শিল্পের তুলা গাছটির ব্যাপারে জানান যে এই গাছ সব স্থানে পাওয়া যায় না । এই গাছের চাষ করা হয় না প্রায় ১৮০ বছরের উপরে । তিনি বলেন এই গাছ পুন: উৎপাদনের চেষ্টা চলছে এবং সাফল্য ৭০ ভাগ পর্যন্ত পাওয়া যায়। এই চেষ্টার ফসল ৪০০ কাউন্টের শাড়ি উৎপাদন । পশ্চিমবঙ্গের মসলিন পুনরুজ্জীবনের জন্য যে প্রচেষ্টা চলছে তার ব্যাপারেও তিনি জানান। সামনে করণীয় কাজের ব্যাপারে জানিয়ে তিনি সকলের সহযোগিতা চান মসলিন পুনরুজ্জীবনের ব্যাপারে ।

অনুষ্ঠানে আলোচক শ্রী চন্দ্রশেখর সাহা বলেন, মসলিন সুতার কাপড় হলেও অত্যন্ত পাতলা ও সুক্ষ্ম বলে তিনি জানান । তিনি আরো বলেন, মসলিন যে হারিয়ে গিয়েছিল এবং পুনরায় এর গল্প উদ্ধারের চেষ্টার জন্য তিনি দৃককে ধন্যবাদ জানান । সূতা তৈরি করা সম্ভব হলে কাপড় তৈরি অসম্ভব নয় বলে তিনি জানান ।

অনুষ্ঠানে আলোচক রুবী গজনবী দৃকের প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি নিজের বক্তব্য শুরু করেন । ব্রিটিশরা পুটি কার্পাস গাছের বীজ পাওয়ার পরও এত দূর আগাতে পারেনি যতটা পেরেছে দৃক, কিন্তু এখন দরকার আরো সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ।

অনুষ্ঠানে আলোচক ড. মো. ফরিদ উদ্দিন ইতিহাসের ভিত্তিতে মসলিন তৈরি তুলার ব্যাপারে বলেন । সে সময় প্রাকৃতিক ভাবে সংগৃহীত তুলা সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না । তিনি বলেন সরকারি-বেসরকারি সকলেরই এই ব্যাপারে সমন্বয়ের সাথে কাজ করতে হবে তাহলে সাফল্য আসবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি মো. মিজানুর রহমান বলেন, মসলিন এদেশের গর্বের ইতিহাস যা ইংরেজদের বিমাতা সুলভ আচরণের কারণে বিলীন হয়ে যায় । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজেরও এই শিল্প পুনরুজ্জীবনের ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে বলে তিনি জানান । সকলে সম্মিল্লিত ভাবে কাজ করলেই কেবল সাফল্য আসবে । তিনি বলেন সরকারি প্রচেষ্টা আরো অনেক বাড়াতে হবে । তিনি আর্জি রাখেন কারো কাছে যদি সত্যিকার মসলিনের কোন সন্ধান থাকে তাহলে তা যেন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডে যোগাযোগ করেন । তিনি জানান বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করবে ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জনাব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার বলেন, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কাজ হলেও কিন্তু সমন্বয় না থাকলে কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে । তিনি আরো বলেন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে মার্কেট দখলের চেষ্টা করতে হবে । তিনি জানান জামদানীর মত মসলিনও এদেশের পণ্য যতদূর সম্ভব দ্রুত পুনরুজ্জীবন করতে যথাসম্ভব সহায়তা শিল্প মন্ত্রণালয় প্রদান করবে বলে জানান ।

অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে সভাপতি ড. লুৎফুর রহমান বলেন, মসলিনের গবেষণার কাজটির জন্য দরকার দক্ষ লোক ও সমন্বয়ের । ৪০০ বছরের পুরোনো একটি ঐতিহ্য এই মসলিন । সকলে একত্রে কাজ করলে ২ বছরের মধ্যে এই ঐতিহাসিক পণ্য পুনরুজ্জীবীত করা সম্ভব বলে তিনি জানান ।

Contact Us:

Phone (PABX): +88-02-58614842, +88-02-58614880, 58615012-3
Fax: +88-02-9667381
E-mail: This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.
Web: www.bangladeshmuseum.gov.bd