ঢাকা, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর সন্ধ্যা ৬টায় নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনী কক্ষে কীর্তিমান চিত্রশিল্পী হাশেম খান -এর ২৭ দিনব্যাপী ‘জোড়াতালির চালচিত্র’ শীর্ষক বিশেষ প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সমাপনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের এমপি। এস.পি.বি.এ ও মাছরাঙা টেলিভিশনের এমডি জনাব অঞ্জন চৌধুরী, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি জনাব শাহরিয়ার কবির, প্রখ্যাত শিল্প সমালোচক স্থপতি রবিউল হুসাইন এবং অধ্যাপক ও শিল্পী রোকেয়া সুলতানা। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। সূচনা সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী তপন মাহমুদ, শিল্পী পীযুষ বড়ুয়া ও শিল্পী কনক খান।
দেশের প্রখ্যাত শিল্পী তপন মাহমুদ, শিল্পী পীযুষ বড়ুয়া ও শিল্পী কনক খান তাদের সুমধুর গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। শিল্পী হাশেম খান ও স্ত্রী পারভীন হাশেম উপস্থিত অতিথিদের হাতে প্রদর্শনীর ক্যাটালগ তুলে দেন।
হাশেম খান অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন এই অনুষ্ঠান দিয়েই কিন্তু প্রদর্শনীর শেষ হচ্ছে না কারণ এই প্রদর্শনীটি ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। তিনি উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন দীর্ঘকাল ধরে দেশের জন্য তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এই প্রদর্শনী চলাকালীন জাদুঘরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও সার্বাত্মক সহযোগিতার জন্য জাদুঘরের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
অনুষ্ঠানে রবিউল হুসাইন শিল্পী হাশেম খানকে দেশের বরণীয় জাতিসত্ত্বা শিল্পী বলে উল্লেখ করেন। এই ব্যক্তিক্রমী প্রদর্শনী দেশকে ভিন্নধর্মী একটি পথের সন্ধ্যান দিয়েছে। শিল্পী হাশেম খান ভিন্ন ভিন্ন বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে তার শিল্পকে সাধারণের সামনে তুলে ধরেছেন। শিল্প প্রতিটি জিনিসের মধ্যে থাকে আর একজন সার্থক শিল্পী তা তুলে ধরেন সাধারণ মানুষের সামনে।
অনুষ্ঠানে রোকেয়া সুলতানা বলেন, এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে করি। তিনি বলেন শিল্পী হাশেম খানের ছাত্র হওয়ার সুবাদে তিনি তাঁকে অনেকদিন ধরে চেনেন। শিল্পী হাশেম খানের সংস্পর্শে থাকার সৌভাগ্যই তাকে শিল্পী হতে উৎসাহিত করেছে বলে তিনি জানান। অনেক সময় শিল্পীরা একটি মাধ্যমে কাজ করতে গিয়ে আবদ্ধ হয়ে যান, কিন্তু শিল্পী হাশেম খান কোনো নির্দিষ্ট মাধ্যমে কাজ করায় নিজেকে আবদ্ধ করেন নি।
অনুষ্ঠানে অঞ্জন চৌধুরী বলেন, প্রদর্শনীর কাজগুলো দেখার পর তার মনে হয় এই প্রদর্শনী বিশ্বের অন্য কোথাও আছে বলে তার মনে হয় না। তিনি আরো বলেন শিল্পী হাশেম খান নতুন ও তরুণ শিল্পীদের জন্য আদর্শ সরূপ। শিল্পী হাশেম খান অত্যন্ত সাহায্য পরায়ণ মানুষ বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, শিল্পী হাশেম খান যেভাবে এদেশের শিল্পীকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তা অতুলনীয়।
অনুষ্ঠানে শাহরিয়ার কবীর বলেন, শিল্পী হাশেম খান কাঠ নিয়ে কাজ করে একটি নতুন শিল্পের জন্ম দিয়েছেন বলে তিনি জানান। এই প্রদর্শনী একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনী বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে দেশের নাম উজ্জ্বল হবে বলে তিনি জানান। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এদেশের শিল্পকে তুলে ধরার জন্য সরকারসহ সকলকে তিনি অনুরোধ জানান।
মাননীয় মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, শিল্পীদেরকে চার দেয়ালের ভেতর আটকে রাখা যায় না। সংস্কৃতির একটি শাখায় শিল্পী হাশেম খান ষাট বছর ধরে বিচরণ করছেন এবং বিশ্বের যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই এই প্রখ্যাত শিল্পী সম্মান পেয়েছেন, করেছেন দেশ ও জাতিকে গর্বিত। শিল্পীকে শুভ কামনা ও অভিবাদন জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।
অনুষ্ঠানে মুনতাসীর মামুন বলেন, শিল্পকলায় নিজেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জড়িত করেছেন। জড়িত ছিলেন রাজনীতিতে। বাংলাদেশে জন্ম এই শিল্পী দেশে যথাযথ সম্মান তিনি পাননি। পেয়েছেন সাধারণ মানুষের ভালবাসা যা তাঁকে করেছে অনুপ্রাণিত। শিল্পী হামেশ খান যখন যেখানে হাত দিয়েছেন তাতেই সফল হয়েছেন। এই শিল্পী সর্বদা নিজেকেই ছাড়িয়ে গেছেন। তিনি সরকারের প্রতি অুনরোধ জানান যেন শিল্পী হাশেম খানকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে সম্মানিত করা হয়।