বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী’র ৯০তম জন্মদিন উদযাপন।

ঢাকা, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বিকেল ৪টায় কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী’র ৯০তম জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকেন অধ্যাপক নিয়াজ জামান, জনাব এ কিউ সিদ্দিকী, কবি হায়াৎ সাইফ, অধ্যাপক শাহীন কবীর এবং অধ্যাপক ফখরুল আলম । সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কবি আসাদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব ফয়জুল লতিফ চৌধূরী ।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী শামা রহমান এবং কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী প্রজ্ঞা লাবণী । অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্থপতি লুভা নাহিদ চৌধুরী ।

অনুষ্ঠান উদ্বোধন হয় শিল্পী সামা রহমানের সংগীত পরিবেশন এবং শিল্পী প্রজ্ঞা লাবণীর কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব ফয়জুল লতিফ চৌধূরী বলেন, জনাব জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী’র মতো মানুষ হচ্ছে আমাদের সমাজের মানদণ্ড । যারা আমাদের সমাজের না থাকার কারণে আমাদের সমাজের বড় একটি অভাব আমরা অনুভব করছি এবং তিনি আরো জানান তাদের মতো স্মরণীয় ব্যক্তিদের নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে একটি স্মৃতি জাদুঘর ।

অনুষ্ঠানে আলোচকগণ অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর জীবন, কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন, ১৯২৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ঝিনাইদহ জেলার দুর্গাপুর গ্রামে পৈত্রিক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব কাটে বাবার সাথে ঘুরে । ১৯৫২ সালে রেডিও পাকিস্তান, ঢাকা কেন্দ্রে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী প্রোগ্রাম সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। দেশে ফেরার পর ঢাকা কলেজে প্রফেসর পদে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে লেকচারার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরে তিনি পদোন্নতি পেয়ে ইংরেজি বিভাগের রিডার ও বিভাগীয় প্রধান হন। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬১ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত মুস্তাফা নূরউল ইসলামের সঙ্গে মিলে প্রকাশ করেন ত্রৈমাসিক 'পূর্বমেঘ'। ১৯৬৭ সালে তিনি মিল্টনের বিখ্যাত গদ্যরচনা অ্যারিওপ্যাজিটিকার অনুবাদ করেন। সে সময় মস্কো, লেনিনগ্রাদ, তিবিলিসি, কিয়েভসহ অনেক শহরেই সফর করেছেন। ১৯৭৪-৭৫ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের খণ্ডকালীন পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন । ১৯৮৪ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর এবং ১৯৯৫ সালের জানুয়ারির সময়টা তিনি অতিবাহিত করেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে। ২০০০ সালে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন এবং ২০০৩ সালে সেখান থেকে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একজন কর্মী । এছাড়াও তিনি ১৯৯০-৯১ সনে দায়িত্ব পালন করেন প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে।

প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী দেশে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থেকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে মূল্যবান অবদান রেখেছেন৷ তিনি বাংলা একাডেমি, ঢাকার ফেলো; এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ-এর ফেলো; বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সভাপতি; নাগরিক নাট্য চক্রের সভাপতি ইত্যাদি বিভিন্ন সম্মানজনক দায়িত্ব পালন করেন ৷

প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী’র মতো মানুষকে নিয়ে বলে শেষ করা যাবে না। বাংলা সাহিত্যে অনন্য অবদান রাখার জন্য বেশ কিছু পুরস্কার লাভ করেন তিনি। যেমন-আলাওল সাহিত্য পুরস্কার; কাজী মাহবুবুল্লাহ বেগম জেবুন্নিসা ট্রাস্ট এওয়ার্ড; অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার; বাংলা একাডেমি, পুরস্কার; এম.এ. হক স্বর্ণ পদক এবং স্বাধীনতা পুরস্কার ।

তিনি আমাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির জগতে উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের একটি। তাঁর মতো যাঁরা, একে একে চলে যাচ্ছেন সবাই। মাত্র কদিন আগে সালাহ্উদ্দীন স্যার চলে গেলেন। বরেণ্য ঐতিহাসিক সালাহ্উদ্দীন আহমদ। কাছাকাছি সময়ে কবি আবুল হোসেন। গত দু-বছরের ভেতরে আরো চিরবিদায় নিয়েছেন অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, খান সারওয়ার মুরশিদ, সরদার ফজলুল করিম, মুশাররফ হোসেন। অন্য আকাশের কথা ভাবছি না। এই আকাশে আলো নিভছে। তাঁদের সময়ের। এমনটাই স্বাভাবিক। তবু শোক অপ্রতিরোধ্য। অভাববোধের শূন্যতাও। সময়টা হারিয়ে যাচ্ছে। যাকে অবলম্বন করে দাঁড়িয়ে আছে বর্তমান, সেই সময়। একজন-দুজন এখনো আছেন। ফাঁকা জায়গাটাই তাঁরা চিনিয়ে দেন। আমাদের অসহায়তাও। বোধহয়, তাঁদের নিরুপায় নিঃসঙ্গতাও।

অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে বিশিষ্ট কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সপ্রতিভ বিচরণ ছিল জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর। অনুবাদ করেছেন ইংরেজি সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য অনেক বই। লিখেছেন প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি। পাঠকপ্রিয় হয়েছে তাঁর কবিতাও। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, বাঙালীর আত্মপরিচয়, শব্দের সীমানা, কোয়েস্ট ফর আ সিভিল সোসাইটি, দ্য কোয়েস্ট ফর ট্রুথ: সেক্যুলার ফিলোসফি বাই আরজ আলী মাতুব্বর, যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ছিলাম ইত্যাদি। এ ছাড়া বাংলা একাডেমির ইংরেজি থেকে বাংলা অভিধানের সম্পাদক তিনি।

পরবর্তীতে অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী’র ৯০তম জন্মদিনের কেক কেটে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করা হয় ।

Contact Us:

Phone (PABX): +88-02-58614842, +88-02-58614880, 58615012-3
Fax: +88-02-9667381
E-mail: This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.
Web: www.bangladeshmuseum.gov.bd