ঢাকা, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। অসাধারণ এই ব্যক্তিত্ব ম্মরণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বলধা গার্ডেন ও নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করে। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক ড. মোহাম্মদ আলী খান। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন ড. আইনুন নিশাত এবং ড. মিহির লাল সাহা। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। স্বাগত ভাষণ দেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব ফয়জুল লতিফ চৌধুরী।
প্রধান অতিথির ভাষণে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, পরিবেশ ও প্রতিবেশ আজ হুমকির সম্মুখীন। আমাদের আজ নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর মতো প্রকৃতিপ্রেমি প্রয়োজন। যারা আমাদের প্রকৃতিকে আবার সাজাতে পারবে। তিনি আরো বলেন, নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর স্মৃতি বিজড়িত বলধা গার্ডেনকে রক্ষায় আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে।
নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর জন্ম ১৮৮০ সালে গাজীপুর জেলার বাছা গ্রামে। তার পিতার নাম মহিম চন্দ্র ঘোষ। বলধার জমিদার হরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ছিলেন গাজীপুরের বলধার জমিদার। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। তিনি নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীকে ১৪ বছর বয়সে দত্তক নেন। দত্তক পিতার প্রেরণায় নরেন্দ্র নারায়ণ ইংরেজি, আরবি, ফার্সি এবং সংস্কৃতি ভাষায় বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পারদর্শী হয়ে উঠেন। বরিশালের বানারী পাড়ার গুহ ঠাকুরতার মেয়ে মৃণালিনী দেবীকে বিয়ে করেন এবং দুই সন্তানের জনক হন।
হরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী জমিদার হন। প্রসঙ্গত সে সময় বলধার জমিদার ঋণভারে জজরিত ছিল। নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী তাঁর দক্ষতা দিয়ে জমিদারীর উত্তরণ ঘটান এবং ব্যাপক ধন সম্পদের মালিক হন। তিনি গাজীপুর থেকে ঢাকার ওয়ারীতে তৈরি করেন বিলাস বহুল বাড়ি কালচার এবং বাগান। জমিদারীর নামে বাড়িটি বলধা হাউজ নামে সমাধিক প্রসিদ্ধ। বিভিন্ন দেশ থেকে নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী নানান জাতের গাছ সংগ্রহ করে বাগানে রোপণ করেছিলেন।
ঐতিহ্য সংরক্ষণের বিষয়ে তার আগ্রহ ছিল। নবাব সিরাজদ্দৌলা তার বাড়ি টিপু সুলতানের বাড়িসহ বিভিন্ন নিদর্শন সংগ্রহ করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একটি জাদুঘর। যা পরবর্তী ঢাকা যাদুঘর সংরক্ষিত হয়ে ছিল। যেটি এখনকার বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করেছে। নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী একজন সুসাহিত্যিক ও নাট্যকার ছিলেন। ধূমকেতু নাটক তার অসাধারণ কীর্তি। বই সংগ্রহের ব্যাপারেও তার আগ্রহ ছিল। তার সংগৃহীত ১৩৮ টি বইয়ের কথা জানা যায়। অসাধারণ এই ব্যক্তিত্ব ১৯৪৩ সালে মৃত্যু বরণ করেন।