বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে ‘Arabian Night: The Cultural Palimpsest of Abanindranath Tagore’ শীর্ষক সেমিনার।

ঢাকা, ০৩ মার্চ ২০১৮। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘Arabian Night: The Cultural Palimpsest of Abanindranath Tagore’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয় । সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন । সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভাসির্টির উপাচার্য অধ্যাপক পারভীন হাসান এবং বিশিষ্ট শিল্প সমালোচক জনাব মোস্তফা জামান । সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক জনাব শামসুজ্জামান খান।

মূল বক্তব্য উপস্থাপনে অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন প্রথমে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সকলকে তিনি ধন্যবাদ জানান এই বলে যে, এত ব্যস্ততার মধ্যেও তার অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা এত সুন্দর করে করার জন্য । বাংলা রেনেসাঁকে বাদ দিয়ে এর ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয়। এরপর তিনি Palimpsest এর সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন একটি গীর্জার উপর একটি মসজিদ তৈরিও Palimpsest এর অংশ। এরপর তিনি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর বলেন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন এই বাংলার রেনেসাঁ । ঠাকুর পরিবারের সদস্য হিসেবে পশ্চিমা শিক্ষা লাভ করলেও অবনের কাজে দেখা যায় দেশপ্রেমের স্পষ্ট উপস্থিতি । প্রথমিক দিকে অবন ঠাকুর শিশুতোষ বইও লিখেছেন । অবন ঠাকুরের প্রথম দিকের একটি কাজ কৃষ্ণলীলা এবং শেষ এর দিকের কাজ কৃষ্ণ মঙ্গলা । মোগল একটি পেইন্টিং-এ মুগ্ধ হয়ে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছবি আঁকায় আগ্রহী হন এবং শাহজাহানের মৃত্যু শীর্ষক ছবিটিও আঁকেন এসময় । মুসলিম ক্ল্যাসিক গুলোও তিনি এঁকেছেন। পাশাপাশি এঁকেছেন কৃষ্ণ ও হিন্দুধর্ম বিষয়ক বিভিন্ন চিত্র ।

আরব্য রজনী নিয়ে আঁকা ছবির সেট শেষ করার পর তিনি তা তাঁর ছাত্রদের বলেন, এতে তাঁর সকল কাজ তুলে ধরা হয়েছে । এই ছবিগুলো যেন একটি করে গল্প বলছে । অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাজ আজ আর আগের মতো নেই । তাঁর একজন ছাত্রই বলেছেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোগল সম্রাজ্যের ব্যাপারে হয়ত অত ভাল বোঝেন না। আবার তাঁরই আঁকা ভারতমাতা চিত্রটি একটি পরিবতির্ত রুপ আজ আমরা দেখতে পাই । অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনের শেষ দিকে সারা পৃথিবী থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলেন এবং সবধরনের সৃষ্টিশীল কর্ম থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন ।

অনুষ্ঠানে আলোচক মোস্তফা জামান বলেন, অবনীন্দ্রনাথ বিংশ শতকের অত্যন্ত প্রশংসিত একজন শিল্পী । অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই প্রথম বিভিন্ন ধারায় চিন্তা শুরু করেন । তারাই বুঝতে পারেন যে উপনিবেশিক চিন্তাধারা আমাদের জাতীয়তা বোধের ক্ষেত্রে বাঁধার মতো। এই বাঁধা অতিক্রম করতে হবে । তিনি আরো বলেন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কাজে রঙের ব্যবহার করতেন অত্যন্ত সুন্দর করে । কাশীদাসের রামায়ন এবং মূল রামায়নের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে তেমনি আরব্য রজনীও মূল হতে সরে এসেছে এর ঘটনাবলি । আরব্য রজনী নিয়ে আঁকা ছবিগুলোতে রঙের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায় তিনি গল্প বলিয়ে হিসেবেও ছিলেন অসাধারণ ।

অনুষ্ঠানে আলোচক অধ্যাপক পারভীন হাসান বলেন, ইতিহাসকে বিশ্লেষণ করার জন্য বিভিন্ন মিডিয়ার সাহায্য নেয়া হয় । অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রকর্ম তৎকালীন কলকাতার ইতিহাস বুঝতে সহায়তা করে । ঐতিহ্য নিজে থেকে জানা যায় না। ঐতিহ্য জানতে হলে নিজেকে এর জন্য পরিশ্রম দিতে হবে । নিজে ইতিহাস না জানলে আমরা বেশি দূরে যেতে পারবো না । জোঁড়াসাকোতে জন্মের সুবাধে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসেছেন বহু বিখ্যাত ব্যক্তির সংস্পর্শে । অবনীন্দ্রনাথ তাঁর কাজের জন্য ব্যবহার করেছেন মোঘল ধারণা। সময়ের সাথে সব শিল্পীর মধ্যেই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তেমন ভাবে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাঝেও আমরা পরিবর্তন দেখতে পাই । তাঁর কিছু কাজে মর্ডানিজমের দেখা পাওয়া যায় ।

সভাপতির ভাষণে শামসুজ্জামান খান বলেন, আরব্য রজনীকে ফোকলোরের অংশ নয় বলে তিনি বলেন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর অন্য দেশের বিখ্যাত কর্ম নিয়ে কাজ করেছিলেন । তিনি এদেশের সেই সব বিখ্যাত কাজ বিখ্যাত করে তোলেন । তিনি এইসব বিদেশি ফোক কাজের মধ্যে মর্ডানিজম আনার চেষ্টা করেন ।

Contact Us:

Phone (PABX): +88-02-58614842, +88-02-58614880, 58615012-3
Fax: +88-02-9667381
E-mail: This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.
Web: www.bangladeshmuseum.gov.bd