বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ: ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন।

ঢাকা, ৭ মার্চ ২০১৮। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বিকেল ৩টায় কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ: ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব হাসানুল হক ইনু এমপি। সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন এবং বিশিষ্ট কবি কামাল চৌধুরী ।

সেমিনারে স্বাগত ভাষণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, ৭ মার্চ ১৯৭১ বাংলাদেশ ও বাঙালির ইতিহাসের একটি ক্রান্তিকাল। এই ভাষণের পর বাঙালির ইতিহাসের বিরাট একটি পরিবর্তন ঘটে। এই স্বাধীনতার মাসে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধের উপর একটি প্রদর্শনীর। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, প্রতিদিন জাদুঘরে আসা দর্শনার্থীরা এই প্রদর্শনী দেখে এই দেশের গর্বের ইতিহাসের ব্যাপারে জানবে, জানবে কিভাবে কত ত্যাগের বিনিময়ে বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বাঙ্গালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বাঙ্গালীর জাগরণের ইতিহাস অতি যত্নের সাথে সংরক্ষণ করছে।

প্রধান অতিথির ভাষণে মাননীয় তথ্যমন্ত্রী জনাব হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে ৭ই মার্চ একটি অবিস্মরণীয় দিন। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ একটি পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতার পথে অগ্রসর করে। বাংলাদেশকে একটি স্বশাসিত ভূখণ্ড হিসেবে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে সাহায্য করেছে। ওই সময় দেশ কিভাবে পরিচালিত হবে তার পূর্ণাঙ্গ একটি চিত্র বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি উল্লেখ করেছেন। ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। তবে ৭ই মার্চ হচ্ছে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর বিরুদ্ধে মহান মুক্তি সংগ্রামের প্রথম পদক্ষেপ। এই ভাষণ বাঙালির মুক্তির সনদ। এই ভাষণে জনগণের ন্যায্য দাবি নিয়ে পরিষ্কার কথা বলেন তিনি। সেই সময়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মধ্য দিয়ে হত্যার কৌশল, অন্যদিকে মাথার উপর পাকিস্তান ভাঙ্গার অভিযোগ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদের অভিযোগ ছিল। এত কিছুর পরেও তিনি তিল তিল করে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে জাগিয়ে তুলতে সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছিলেন বলেও তিনি জানান।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা অবিস্মরণীয় গৌরবের এক অনন্য দিন। সুদীর্ঘকালের আপসহীন আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক উত্তাল জনসমুদ্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। এদিন বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে কী করতে হবে তার দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এদিন সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়েও স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিঁনি। ১৯৫২ সালে শুরু হওয়া সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আসে ৭ মার্চের এই ভাষণ। সেদিন স্বাধীনতা ঘোষণা করার জন্য বাঙালিদের এবং তা না করার জন্য পাকিস্থানিদের দেওয়া অত্যন্ত চাপের মধ্যে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এই ভাষণে তিনি খুব দুরদর্শীভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। এই ভাষণের পর ৯ মার্চ মাওলানা ভাসানী এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। গান্ধীর সাথে বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোরনের পার্থক্য বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন পাকিস্তানিদের ভিত নড়িয়ে দেয় ।

অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু সেদিন জনসভায় আসতে একটু বিলম্ব করেন। স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হবে কি হবে না, এ নিয়ে তখনো রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলছে নেতৃবৃন্দের মধ্যে। বেলা ঠিক সোয়া ৩টায় সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি ও মুজিব কোট পরিহিত বঙ্গবন্ধু যখন মঞ্চে ওঠেন তখন বাংলার বীর জনতা করতালি ও স্লোগানের মধ্যে তাঁকে অভিনন্দন জানান। মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধু যখন জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন তখন পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লাখ লাখ বাঙালির ‘তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ, তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এই ভাষণ থেকেই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

কবি কামাল চৌধুরী বলেন, ১৯৬৬’র ৬-দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচনের পর যখন বাংলার জনগণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনা শুনতে অধীর আগ্রহে বসেছিল, তখনই ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত করার জন্য দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। সেদিন উত্তাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাংলার মুক্তিকামী জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু- আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।

Contact Us:

Phone (PABX): +88-02-58614842, +88-02-58614880, 58615012-3
Fax: +88-02-9667381
E-mail: This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.
Web: www.bangladeshmuseum.gov.bd