ঢাকা, ২০ মার্চ ২০১৮। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনী গ্যালারিতে ২০ মার্চ ২০১৮ থেকে ২৭ মার্চ ২০১৮ পর্যন্ত ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র ও স্মৃতি-স্মারক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। বিকেল ৪:৩০ মিনিটে জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জনাব গোলাম কুদ্দুছ। সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও বিশিষ্ট লেখক জনাব মফিদুল হক।
স্বাগত বক্তব্যে জনাব ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, মার্চ মাস বাঙালীর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের পর আসে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা। এরপর প্রথমে প্রতিরোধ ও পরবর্তীতে সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আসে স্বাধীনতা। তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও স্বাধীনতা জাদুঘরের জন্য বেশ কিছু স্মারক প্রদান করেছে। ২ জন ভারতীয় কিউরেটর এসেছেন যারা স্বাধীনতা জাদুঘর ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ৪টি গ্যালারি সাজাতে সহায়তা করবেন। মহান স্বাধীনতার মাস উদ্যাপনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র ও স্মৃতি-স্মারক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এই প্রদর্শনী ২০ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ২৭ মার্চ পর্যন্ত চলবে।
প্রধান অতিথির ভাষণে ড. মসিউর রহমান বলেন, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ধারণা হয় আমরা সম অধিকার হতে বঞ্চিত। উপমহাদেশের ইতিহাস দেখলে বুঝা যায় এ দেশের ইতিহাস অন্যান্য দেশ হতে ভিন্ন। ১৯৪৭ এর স্বাধীনতার পূর্বের নির্বাচনে এদেশে মুসলীম লীগ বিজয়ী হয় কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃত্ব চলে যায় যাদের সমর্থকরা থেকে যান ভারতে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতা হাতে রাখার জন্য তারা সেনাবাহিনীর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে নেয়। এখনো পাকিস্তান সেনাশাসিত দেশ হিসেবে থেকে গেছে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বাধীন এবং এ দেশের মানুষের হাতে রয়েছে ক্ষমতা। বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন শুরু করেন যা স্বাধীনতা আনার পর শেষ হয়। তিনি বাংলার অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে ছিলেন অবিচল। তিনি আরো বলেন, ইতিহাস সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসকে প্রতিদিন নতুনভাবে আবিস্কার করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মারক প্রদানের জন্য তিনি ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন ভারত ও বাংলাদেশের এ বন্ধুত্ব আরো দৃঢ় হবে।
অনুষ্ঠানের আলোচক জনাব গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের বীজ বপন হয় ১৯৪৭ এর সময়। পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর দেখা যায় পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা পাকিস্তানের জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করা হয় উর্দুকে এবং বাঙ্গালীরা এর প্রতিবাদ করা শুরু করে। এর পর ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েও সরকার গঠন করতে দেয়া হয় না এদেশের মানুষদের। মানুষ বুঝতে পারে পশ্চিম পাকিস্তানের অধীনে থাকলে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ তাদের অধিকার হতে বঞ্চিত হতে থাকবে। এরপর ১৯৭০ সালের বিপুল ব্যবধানে বিজয়ের পরও দেখা যায় পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের গড়িমসি। এর ভিত্তিতে আসে ৭ই মার্চের ভাষণ এবং এই ভাষণের পরই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী নিরস্ত্র, নিরীহ বাঙ্গালীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। বাঙ্গালীরা এই অসমযুদ্ধে অতি সাহসের সাথে অংশগ্রহণ করে এবং বিজয় ছিনিয়ে আনে পাকিস্তানের হাত থেকে। তিনি আরো বলেন, এদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বহু গণকবর। এই গণকবরগুলো সংরক্ষণ করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।
অনুষ্ঠানের সভাপতি জনাব মফিদুল হক বলেন, একটি ধর্মান্ধতার ভিত্তিতে জন্ম হয় পাকিস্তান নামক দেশের। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ১৯৪৭ সালের উপমহাদেশের স্বাধীনতাকে বাংলায় দেখা হত পার্টিশন নামে। এ সময় দুই বাংলাকে বিভক্ত করা হয়। তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা এদেশে রক্তের বন্যা বয়ে দেয় কিন্তু দমিয়ে রাখতে পারেনি এ দেশের মানুষকে। এদেশের মানুষ বহু ত্যাগ স্বীকার করে স্বাধীনতা অর্জন করে। গর্বের সাথে বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম নেয় একটি নতুন দেশের যার নাম বাংলাদেশ। যেদেশে সকল ধর্মের মানুষ সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সাথে বসবাস করে। তরুণ প্রজন্মের সামনে এই ইতিহাসকে তুলে ধরতে হবে যাতে তারা এদেশের গর্বের ইতিহাস জেনে বড় হয়ে উঠতে পারে।