ঢাকা, ২৮ মার্চ ২০১৮। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বিকেল ৩ টায় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রকৌশলী ফজলুর রহমান খান: জীবন ও কীর্তি শীর্ষক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নগরবিদ ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক আদনান মোর্শেদ এবং ভিত্তি স্থপতি বৃন্দ লিমিটেডের স্থপতি পরিচালক জনাব ইকবাল হাবিব।
আলোচনায় অধ্যাপক আদনান মোর্শেদ বলেন, ১৯২৯ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময়কালে জন্ম নেন ফজলুর রহমান খান । ১৯৮২ সালের ২৬ মার্চ জেদ্দায় মৃত্যুবরণ করেন এই বিশ্ব নাগরিক। তিনি আরো বলেন, তিনি স্কাইস্ক্র্যাপার ডিজাইনে বৈপ্লবিক কী পরিবর্তন এনেছিলেন তা নিয়ে। তিনি বলেন, একটি ভবন যখন আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে, তখন তার কাঠামোর ওপরে পাশ থেকে একটা চাপ আসে। উচ্চতা যত বাড়তে থাকে, মূলত বাতাস কিংবা ভূমিকম্পভিত্তিক এই চাপও তত বাড়তে থাকে।এই চাপ সহ্য করার জন্য সুউচ্চ ভবন তৈরিতে, ভিত্তি থেকে শুরু করে কলাম এবং বিমের আয়তন প্রচলিত জ্ঞানে প্রকাণ্ড করার দরকার হতো। এতে করে যে শুধু ভবন তৈরির উপাদানের অসাশ্রয় হতো তা নয়, ভবনের চেহারাতেও এর প্রকাশ্য একটা প্রকোপ পড়ত। এফ আর খান ‘টিউবুলার কনসেপ্ট’ নামে একটি মৌলিক প্রকৌশলতত্ত্ব স্কাইস্ক্র্যাপার ডিজাইনে নিয়ে আসেন। এই টিউবুলার কনসেপ্ট ব্যবহার করে তৈরি হয় সিয়ারস টাওয়ার, যা ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু করে দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি জানান, ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ফজলুর রহমান খান সিয়ারস টাওয়ার ডিজাইন করছিলেন। সেই সময় বারবার কাজ ফেলে রেখে আমেরিকার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন স্বাধীনতার সপক্ষে জনসমর্থন গড়ে তোলার জন্য। তিনি বলেন, এ অতি দুঃখের কথা যে এদেশে এখনো প্রকৌশলী ফজলুর রহমান খান-এর উপর গবেষণার অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, ফজলুর রহমান খান ও তাঁর কাজের উপর গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর নামে ঢাকায় একটি সড়কের নামকরণ করার কথা বলেন।
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, যে কজন বাংলাদেশি বাঙালি বিশ্বের কাছে এ দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে তাদের মধ্যে ফজলুর রহমান খান একজন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ২টি প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতার স্বপক্ষে জনসমর্থন গড়ে তোলার জন্য এবং এদেশের মানুষদের সহায়তার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিল। তিনি আরো বলেন, এদেশে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের অভাব রয়েছে। এখনো তাঁর উদ্ভাবিত কৌশল ব্যবহার করেই বিশ্বের সকল স্কাইস্ক্র্যাপার তৈরি করা হয়। এই কৌশলে তৈরিকৃত স্কাইস্ক্র্যাপার স্বল্প খরচে কিন্তু মজবুত হয় বলেও তিনি জানান। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তিঁনি নিজগুণে আলো ছড়ান বলে জানান বক্তা। তিনি স্বীকৃতি পান কাঠামো প্রকৌশলের আইনস্টাইন হিসেবে। তাঁর মতো মানুষ এদেশের গর্ব বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন জনবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে যাতে মানুষ উপকৃত হয়।
সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, কম খরচে সর্বোচ্চ ভবন তৈরির প্রযুক্তি তিনি উদ্ভাবন করেন। তিনি আরো বলেন, জনবহুল একটি দেশ বাংলাদেশ এবং ঢাকা বিশ্বের সর্বোচ্চ ঘনবসতিপূর্ণ একটি শহর। এদেশে দরকার উচুঁ ভবনের যাতে মানুষ সহজে বসবাস করতে পারে। ১৯৭১-এর পর তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি এদেশে বেশকিছু কাজ করতে চেয়েছিলেন বিশেষ করে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে একটি কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তা আর হয়ে উঠেনি। আমরা এই মহান ব্যক্তিকে কাজে লাগাতে পারিনি। তিনি বলেন এই মহান ব্যক্তিকে যথার্থ সম্মান প্রদান করে আমরা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের সামনে অনুকরণীয় একটি আদর্শ সৃষ্টি করতে পারব। অনুষ্ঠানের দর্শক সারিতে উপস্থিত থেকে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীরও এফ আর খানের সম্পর্কে আলোচনা করেন।