ঢাকা, ১০ এপ্রিল ২০১৮। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে খ্যাতিমান আলোকচিত্রশিল্পী নাসির আলী মামুন-এর ফটোজিয়াম শীর্ষক ২৪ দিনব্যাপী একক পোর্ট্রেট আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। প্রদর্শনীটি ১০ এপ্রিল ২০১৮ থেকে শুরু হয়ে ৩ মে ২০১৮ পর্যন্ত চলবে। বিকাল ৫টায় নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে প্রদর্শনীটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর এমপি। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক জনাব মতিউর রহমান এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জনাব আবুল খায়ের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব ফয়জুল লতিফ চৌধুরী এবং প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। নাসির আলী মামুন-এর এ প্রদর্শনীটি জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাককে (১৯১৪-১৯৯৯) উৎসর্গ করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের মোট ১৩০টি সাদাকালো পোর্ট্রেট আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ জতীয় জাদুঘরে একটি আলোকচিত্র গ্যালারি খোলার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফির জন্য বিখ্যাত নাসির আলী মামুনের এই প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পারায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর অত্যন্ত আনন্দিত। বহুদিন ধরে এই প্রদর্শনী আয়োজন করার প্রচেষ্টা ছিল এবং অবশেষে আজ আলোর মুখ দেখলো এই প্রদর্শনী। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর নিয়মিত বিভিন্ন প্রদর্শনী ও সেমিনারের আয়োজন করে থাকে যা এদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের পাশাপাশি সমকালীন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি ও মানুষের কাছে তুলে ধরছে অত্যন্ত সফলতার সাথে।
অনুষ্ঠানে আলোকচিত্রী শিল্পী জনাব নাসির আলী মামুন তাঁর অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, ফটোজিয়াম শব্দটি ফটো ও মিউজিয়াম শব্দ দুটির সমম্বয়ে করা। তিনি বলেন জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক নিজে নাসির আলী মামুনকে অর্থ ও বুদ্ধি দিয়ে সাহায্য করেছেন তাঁর পোর্ট্রেট তোলার ক্ষেত্রে। তাঁর সার্বক্ষণিক সহযোগিতায় দেশের বিখ্যাত মানুষদের ছবি তোলার উৎসাহ পান নাসির আলী মামুন। তিনি আরো বলেন, প্রখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি নিয়ে একটি মিউজিয়াম তৈরি করতে তিনি আগ্রহী, যাতে সকলের সাহায্য প্রার্থনা করেন তিনি। সর্বশেষে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরকে এই আয়োজন করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জনাব আবুল খায়ের বলেন, তিনি এই প্রদর্শনী দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। নাসির আলী মামুন ও জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের সাথে খুব ভালো সম্পর্কের ব্যাপারে সবাই জানেন। তিনি বলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০১৯ সালে একটি মিউজিয়াম নির্মিত হবে। এতে প্রাধান্য পাবে বিভিন্ন চিত্রকর্ম। এছাড়া আলোকচিত্রেরও একটি গ্যালারি থাকবে যাতে নাসির আলী মামুন এর ছবিও থাকবে। তিনি আরো বলেন, জনাব ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক হওয়ার পর জাদুঘরের পরির্বতন চোখে পড়ার মতন যা অনুকরণীয়।
সম্মানিত অতিথি দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক জনাব মতিউর রহমান বলেন, নাসির আলী মামুন বহুদিন ধরে নিবেদিত ভাবে ছবি তোলার কাজ করছেন। দেশে অল্প সংখ্যক মানুষ রয়েছে যারা অর্থের পেছনে ছোটেননি, নাসির আলী মামুন তাদেরই একজন। বাংলাদেশে তিনিই প্রধান যিনি এত বছর ধরে পোট্রেট তোলার পেছনে নিজের জীবনের এতটা সময় ব্যয় করেছেন। তিনি শুধু দেশের নয় বিদেশেরও বিখ্যাত ব্যক্তিদের বেশ কিছু পোর্ট্রেট ছবি তুলেছেন। তাঁর ছবিতে চোখে পড়ে সমাজের বিভিন্ন পরিবর্তন। নাসির আলী মামুন যখন কারো ছবি তোলেন তখন তাঁর ফোটগ্রাফ ছাড়াও তাঁর দ্বারা কিছু আঁকিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেন। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরকে এই আয়োজন করার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান ও নাসির আলী মামুনকে জানান শুভেচ্ছা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেন, নাসির আলী মামুন, দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পোর্ট্রেট অলোকচিত্রশিল্পী। সৃষ্টিশীল এবং খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বদের বিভিন্ন দুর্লভ মুহুর্ত তাঁর ক্যামেরায় বন্দি করে চলেছেন পরম মমতায়। সাদা-কালো পোর্ট্রেট আলোকচিত্রে আলো-ছায়ার দুর্দান্ত বণ্টন তাকে সমকালীন অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্রশিল্পীতে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের ফটোগ্রাফিতে তিনি এক নতুন ঘরণার সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন, নাসির আলী মামুন এক অর্থে পাগল যে অর্থে সকল শিল্পীর মধ্যে পাগলামী দেখা যায়। যা কাজের পাগলামী। তিনি পাগল কারণ পাগল না হলে এই কাজ আর কে করত? তিনি আরো বলেন এই প্রদর্শনীতে যাদের ছবি স্থান পেয়েছে তাদের সবাই ছিলেন এক একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি আরো বলেন, ‘নাসির আলী মামুন এমন একজন শিল্পী যিনি ক্যামেরার চোখে দেখেছেন দেশকে। তাঁর মতো শিল্পীদের সহায়তা করাই আমাদের কাজ।’
প্রদর্শনীর উদ্বোধক ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, নাসির আলী মামুন এতই পরিচিত যে তাঁর ব্যাপারে নতুর করে বলার কিছু নেই। দেশের সৌন্দর্যের যা কিছুই শিল্পের সাথে জড়িত তা নিয়ে কাজ করে আজ সে সকলের কাছে পরিচিত। তিনি আরো বলেন, যার ছবি তোলা হচ্ছে তার চারিত্রিক ও পেশাগত দিক তুলে ধরতে পারাই আলোকচিত্রীর সার্থকতা। নাসির আলী মামুন যাদের ছবি তুলেছেন তাদের ব্যক্তিত্বও ফুটে উঠেছে ছবিতে। নাসির আলী মামুন তাঁর ছবি তোলার জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটেছেন সর্বদা এবং তাঁর ছবিতে নিখুঁত ভাবে তুলে ধরেছেন দেশ ও বিদেশের বিখ্যাত সব ব্যক্তিদের।