বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে বঙ্গবন্ধু :নারী জাগরণ ও ক্ষমতায়ন শীর্ষক সেমিনার।

ঢাকা, ১৭ আগস্ট ২০১৮। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস ২০১৮ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক সেমিনার, জাদুঘরে সংগৃহীত বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি-নিদর্শন এবং আলোকচিত্রের মাসব্যাপী বিশেষ প্রদর্শনী, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি। অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে বিকেল ৫টায় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু : নারী জাগরণ ও ক্ষমতায়ন শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি এমপি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নাজমা আকতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাবিতা রেজওয়ান রহমান। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন। স্বাগত বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব মো. আব্দুল মান্নান ইলিয়াস।

স্বাগত বক্তব্যে জনাব মো. আব্দুল মান্নান ইলিয়াস বলেন, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ এর আগস্ট মাসে সপরিবারে শহীদ হন। এর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এদেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এই মহান নেতার স্মরণে আয়োজন করেছে ১১টি সেমিনার, বিশেষ প্রদর্শনী ও কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠানের। এই সেমিনারগুলো বিভিন্ন বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর অবদানের ব্যাপারে আমাদের ধারণা দেবে।

প্রবন্ধ উপস্থাপনায় নাজমা আক্তার বলেন, নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ যার নামে পরিচালিত হয় তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিন্তু সর্বদা বঙ্গবন্ধুকে সমর্থন দিয়েছিলেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেসা মুজিব। বেগম মুজিব ছিলেন প্রচার বিমুখ, তিনি সর্বদা পেছন থেকে সমর্থন দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকে। স্বাধীনতা সম্পর্কিত সকল আন্দোলনে ছিল নারীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সকল আন্দোলনে তারা অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭২ সালের নবগঠিত সংবিধানে বঙ্গবন্ধু নারী পুরুষের সাম্য প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন ধারা পড়লেই তা বুঝতে পারা যায়। এ সংবিধানে বিশেষ নারী আসন রাখা হয়। যুদ্ধের পর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্ত্রী, কন্যাদের জন্য নারী আশ্রয় কেন্দ্রও চালু করেন তিনি। বর্তমান সরকার নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে তিনি জানান। নারীদের উচ্চ শিক্ষায় আমরা পিছিয়ে আছি। এর পরিবর্তনের প্রচেষ্টা করছে বর্তমান সরকার।

আলোচনায় ড. সাবিতা রেজওয়ান রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা একই সুতোয় বাধা। বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের প্রাণের বন্ধু। বঙ্গমাতা কখনো বঙ্গবন্ধুকে সাংসারিক সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত হতে দেননি। তিনি বঙ্গবন্ধুকে সর্বদা সমর্থন দিয়ে গেছেন। তার উৎসাহে বঙ্গবন্ধু জেলে ডায়রি লেখার কাজে হাত দেন। তিনি বলেন প্রবন্ধে বলা হয়েছে মানবসভ্যতার শুরুতে নারী-পুরুষ একত্রে কাজ করতেন কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পুরষ কর্তৃত্ব স্থাপিত হয় সমাজে। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু সর্বদা নারীদের প্রাপ্য সম্মান দিয়েছেন। তিনি তার লেখায় সর্বদা বঙ্গমাতা কীভাবে তাকে সর্বদা সমর্থন ও সাহায্য করেছেন তা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন প্রবন্ধে বলা হয়েছে একটি ঘটনার কথা যাতে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ পরবর্তী বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের পিতা-মাতার পরিচয় বঙ্গবন্ধুর নাম ও ঠিকানা দিতে বলেছিলেন তাই বঙ্গবন্ধু ছিলেন সত্যিকারের জাতির পিতা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিমিন হোসেন রিমি এমপি বলেন, সমাজের ২টি অনুসঙ্গ একটি পুরষ ও অন্যটি নারী। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রথম থেকেই নারীদের সম্মান দিয়েছে। ১৯৬৪ এর ম্যানোফেস্টো থেকে তিনি বলেন, সর্বদা নারী পুরষদের সমান চোখে দেখে তাদের অধিকারের ব্যাপারে কথা বলেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ইতিহাস এর দিকে তাকালে দেখা যায় কখনো সামনে থেকে কখনো নেপথ্যে কাজ করেছে নারী সমাজ। যখন আওয়ামী লীগের পুরষ নেতৃত্ব জেলে ছিল তখন নারীরা তাদের মুক্তির জন্য ও দলকে একতাবদ্ধ রাখার জন্য নেতৃত্ব দেন। ৭৫ পরবর্তী সময়ে যখন ঘরোয়াভাবে হালকা রাজনীতির অনুমতি পাওয়া যায় তখন মহিলাদের মধ্যে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, জোহরা তাজউদ্দিন ছিলেন অন্যতম। এসময় দেশের আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার দায়িত্ব নেন জোহরা তাজউদ্দিন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন একটি পরিকল্পনা কমিটি গঠন করা হয়, যার স্থানীয় পর্যায়ে দেয়া ছিল কম পক্ষে ২ জন মহিলা থাকবেন ইউনিয়ন পরিষদে। নারী-পুরুষ কখনো ভেদাভেদ করেনি আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন ছিল তা পূরণ করে চলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার জন্য নারীদেরও অংশগ্রহণ দরকার বলে তিনি জানান।

সভাপতি ভাষণে সেলিনা হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে বুঝতে পারা যায় নারীদের ব্যাপারে তার কী ধরনের ধারণা ছিল। ৫২র ভাষা আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে তিনি লিখে ছিলেন। ৫৪ সালের নির্বাচনে এক বৃদ্ধা মহিলার কথাও তিনি বলেন যার কথা বঙ্গবন্ধুর লেখায় উঠে এসেছে। নারীর মর্যাদা কখনো হেয় করেননি বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু কখনো নির্যাতিত নারী শব্দটি উচ্চারণ করেননি। নারীরা মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে ছিলেন। তিনি নারীদের ন্যায়ের পক্ষে সর্বদা অবস্থান নিয়ে ছিলেন। যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাত্মক সহায়তা দিয়েছিলেন এদেশের বীর নারীরা।

Contact Us:

Phone (PABX): +88-02-58614842, +88-02-58614880, 58615012-3
Fax: +88-02-9667381
E-mail: This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.
Web: www.bangladeshmuseum.gov.bd