ঢাকা, ১৮ আগস্ট ২০১৮। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস ২০১৮ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক সেমিনার, জাদুঘরে সংগৃহীত বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি-নিদর্শন এবং আলোকচিত্রের মাসব্যাপী বিশেষ প্রদর্শনী, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি। অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে বিকেল ৫টায় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের সংবিধান শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক এমপি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মো. মশিউর রহমান। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল জনাব মুরাদ রেজা। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব মো: মসিউর রহমান।
স্বাগত বক্তব্যে জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব মো: আব্দুল মান্নান ইলিয়াস বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরার পরই খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান উপহার দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, এই সংবিধানটি ছিল অত্যন্ত সময়োপযোগী এক সংবিধান। এই সংবিধানে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্লের সোনার বাংলার একটি ধারণা পাওয়া যায়।
প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ জাতি রাষ্টের আত্মপ্রকাশের পরই বঙ্গবন্ধু তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেয়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তার একটি উদাহরণ এই সংবিধান। দেশে ফিরে আসার পরপরই তিনি তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠনের কাজে। এজন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেন যা ছিল সংবিধান। ৭২ এর সংবিধান একটি আধুনিক ও সময়োপযোগী সংবিধান যা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। ৭০ এর নির্বাচন তৎকালীন পাকিস্তানের একটি টানিং পয়েন্ট। এই নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ছিল মানুষের সমর্থন জানতে পারা যায়। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে স্থায়ী সংবিধান রচনার নির্দেশ দেন। সংবিধান তৈরির জন্য কমিটি ৭৫ বার বৈঠক করেন এবং ৩০০ ঘন্টার বেশি সময় দেন এবং অক্টোবরে সংবিধানের খসড়া উপস্থাপন করেন। এই সংবিধান ছিল বাংলার মানুষের প্রাণের কথা। ৪টি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে এই সংবিধান তৈরি করা হয়- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।
আলোচনায় জনাব মুরাদ রেজা বলেন, বাঙালি জাতির স্বাধীকার আন্দোলনের একটি মাইল ফলক ১৯৭০ এর নির্বাচন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুই ছিলেন অনুপ্রেরণা। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে ছিলেন একথা সংবিধানেই দেয়া আছে। যারা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাকে অস্বীকার করেন তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকেই শুধু অস্বীকার করেন না, বাংলাদেশের সংবিধানকেও অস্বীকার করেন। ১৯৭২ সালের সংবিধানে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। সংবিধানে বলা হয়েছে প্রজাতন্ত্রের সকল কিছুর মালিক জনগণ। নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগ হচ্ছে সংবিধানের ৩টি শাখা, যারা একে অন্যের পরিপূরক। তিনি বলেন সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক একথা সংবিধানের কোথাও নেই সুতরাং বাংলাদেশের সংবিধানের অভিভাবক সুপ্রিম কোর্ট নয় এটি পরিস্কার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এডভোকেট আনিসুল হক এমপি বলেন, স্বাধীনতা ঘোষণা করার জন্য একটি প্রেক্ষাপট থাকতে হয়। ১৯৪৮ সাল থেকে বাঙালিদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর তাঁর বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র করার একটি হীন প্রচেষ্টা চালায় কিন্তু তারা সফল হয়নি। আমরা বঙ্গবন্ধুর মধ্যে ২ ধরনের দিক দেখা যায়-একটি স্বাধীনতার পূর্বে অপরটি স্বাধীনতার পর। স্বাধীনতার পূর্বে দেখা গিয়েছে বঙ্গবন্ধু দেশ ও জাতির জন্য আন্দোলন করেছেন ও কারাবরণ করেছেন। সংবিধানে ছিট মহলগুলোর ব্যাপারেও বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকীতে এই শপথ নিই যাতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠন করা যায়।
সভাপতির ভাষণে জনাব মো. মসিউর রহমান বলেন, ১৯৭২ সালে গৃহীত বাংলাদেশের সংবিধান অত্যন্ত গরুত্বপূর্ণ একটি দলিল। বিশ্বের কোথাও এত অল্প সময়ের মধ্যে এত ভাল একটি সংবিধান রচিত হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বৈদেশিক যড়যন্ত্রের শিকার। বঙ্গবন্ধু হত্যায় যারা সরাসরি জড়িত তাদের বিচার আমরা করতে পেরেছি। নেপথ্যে যারা ছিলেন তাদেরও বিচার করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের পর আমাদের দেশের অগ্রগতি স্তিমিত হয়ে পড়ে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে পুনরায় উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সামিল হয়েছে।