বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে ‘বঙ্গবন্ধু কীভাবে আমাদের স্বাধীনতা এনেছেন’ শীর্ষক সেমিনার ও মাসব্যাপী প্রদর্শনী ও সেমিনারের সমাপনী অনুষ্ঠান।

ঢাকা, ৩১ আগস্ট ২০১৮। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস ২০১৮ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক সেমিনার, জাদুঘরে সংগৃহীত বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি-নিদর্শন এবং আলোকচিত্রের মাসব্যাপী বিশেষ প্রদর্শনী, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি। অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে বিকেল ৩:৩০ মিনিটে জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু কীভাবে আমাদের স্বাধীনতা এনেছেন শীর্ষক একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন এবং সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান। সেমিনারের দ্বিতীয় পর্বে জাদুঘরে আয়োজিত মাসব্যাপী প্রদর্শনী ও অনুষ্ঠানমালার সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জানাম নূর এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নাসির উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান।

স্বাগত ভাষণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব মো. আব্দুল মান্নান ইলিয়াস বলেন, আজকের যে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক বলে আমরা গর্ববোধ করি সে দেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এদেশের জন্য আজীবন তিনি সংগ্রাম করে গেছেন এবং তাঁর সংগ্রামের ফসল হিসেবে আমরা পেয়েছি বর্তমান বাংলাদেশকে। তিঁনি খুব অল্প সময় পেয়েছিলেন স্বাধীন দেশের জন্য কাজ করার কিন্তু এই স্বল্প সময়ে তিনি বর্তমান বাংলাদেশের ভিত্তি তৈরি করে দিয়ে যান। এই মহামানবের ব্যাপারে জানার কোন শেষ নেই। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে আগস্ট মাসব্যাপী প্রদর্শনী, সেমিনার ও কবিতা আবৃত্তি আনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আজ এই আয়োজনের শেষ দিন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অনেককিছু এখনো অজানা থেকে রয়ে গেছে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর সামনে ও এমন আরো আয়োজন করবে যাতে দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে আরো ভালোভাবে জানতে পারে।

বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনের রূপরেখা মোটামুটি আমরা সবাই জানি। বাংলাদেশের পটভূমিও আমাদের অজানা নয়। তাঁর জীবন তো এক অর্থে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেরই ইতিহাস। ১৯৪৮, ১৯৫৪,১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০-প্রতিটি বছর আমাদের ইতিহাসের মাইলফলক এবং প্রতিটির সঙ্গে তিনি জড়িত। অনেকের ধারণা ১৯৬৬-১৯৭০ সময়কালের মধ্যে বাংলাদেশের আন্দোলণের সৃষ্টি। ১৯৪৮ সাল থেকেই বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি অস্পষ্ট ধারনা ছিল বঙ্গবন্ধুর। ক্রমে তা পরিচিত পায় ছয় দফা এবং আরো পরে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে। এ তো গেল বাহ্যিক দিক। কিন্তু স্বাধীনতা আনার জন্য আরো অনেক উপাচারের দরকার ছিল। এর একটি ছিল ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ। অন্তরালে এই ঘটনা গুলি অধিকাংশ মানুষেরই অজানা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো: নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ 'প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড' হবে বলে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তিনি জীবিত থাকলে তা এতদিনে বাস্তবায়ন হতো। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছাড়াই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে ৮ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল, যা এখন পর্যন্ত আর কখনও হয়নি।

প্রধান অতিথির অতিথির বক্তব্যে জনাব আসাদুজ্জানাম নূর এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কি করে হঠাৎ করে বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠলেন? কারণ, বাংলার মানুষ কী চায়, কিভাবে তা আদায় করতে হবে তা সঠিক মুহূর্তে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পেরেছিলেন একমাত্র তিনিই৷ নীতি-আদর্শের সংগ্রামে অন্য দল তো বটেই, নিজ দলের নেতাদের চেয়েও যোজন যোজন এগিয়ে ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শনের মূল বিষয় ছিল দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ানো, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।তিঁনি একেবারেই শূন্য হাতে শুরু করেছিলেন। কোনো গুদামে খাবার ছিল না, ব্যাংকে টাকা ছিল না; যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল না। তার মধ্যেও অল্প দিনের মধ্যে যমুনা সেতু, সমুদ্রসীমা, স্যাটেলাইট- সব নিয়েই তিনি ভেবেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। স্বাধীনতার পর যারা মনে করত- বাংলাদেশ টিকবে না, তারাই এখন বাংলাদেশের উন্নয়নে বিস্ময় প্রকাশ করছে।

সভাপতির ভাষণে শিল্পী হাশেম খান বলেন, কিছু কারণে নতুন প্রজন্ম এখনও বিভ্রান্ত। এমনকি কোনো কোনো পরিবার তাদের সন্তানকে সঠিক ইতিহাস শেখাতে পারছে না। বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি এবং এই অভ্যুদয়ের ইতিহাসের মূল কারিগর কারা? এসব সঠিক ইতিহাস সন্তানদের জানতে দিতে পারিনি। এখন সুযোগ এসেছে সন্তানদের সঠিক ইতিহাস জানানোর।৫২, ৬৯, ৭০, ৭১৷ গৌরবময় ইতিহাসের জন্ম দিয়েও মানবজাতির ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস ঘটনাটির কালো দাগ থাকল আমাদের নিজেদের কপালেই৷ স্বাধীনতার পাঁচ বছরের মাথায় সপরিবারে স্বাধীনতার মূল ভূমিকায় থাকা ব্যক্তিটিকে হত্যা করাটা যেমন নৃশংস, হত্যার বিচার করা যাবে না, খোদ সংবিধানে এমন ভয়ংকর কালাকানুন জারি করাটা তার চেয়েও নৃশংসতম৷

Contact Us:

Phone (PABX): +88-02-58614842, +88-02-58614880, 58615012-3
Fax: +88-02-9667381
E-mail: This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.
Web: www.bangladeshmuseum.gov.bd