বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে ‘সংগীত শিক্ষা প্রসারে ওস্তাদ মুন্শী রইস উদ্দীন’ শীর্ষক সেমিনার।

ঢাকা, ২ ডিসেম্বর ২০১৮। উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ মুন্‌শী রইস উদ্দীন স্মরণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে সংগীত শিক্ষা প্রসারে ওস্তাদ মুন্‌শী রইস উদ্দীন শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, লোক সংগীতশিল্পী ও গবেষক অধ্যাপক ইন্দ্রমোহন রাজবংশী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সঙ্গীত গবেষক ড. জেসমিন বুলি। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকেন ওস্তাদ মুন্‌শী রইস উদ্দীনের পুত্র জনাব এ এফ এম আসাদুজ্জামান এবং উদীচীর সহসভাপতি ও বিশিষ্ট গণসংগীত শিল্পী জনাব মাহমুদ সেলিম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বরেণ্য সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমান।

স্বাগত ভাষণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ বলেন সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৪জন বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্ম/মৃত্যু বার্ষিকী পালনের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরকে নির্দেশনা দিয়েছেন। এই ১৪টি সেমিনারের মধ্যে ওস্তাদ মুন্‌শী রইস উদ্দীনের অনুষ্ঠান অন্যতম। এর আগে ওস্তাদ মুন্‌শী রইস উদ্দীনকে নিয়ে কোনো সেমিনারের আয়োজন করা হয়নি। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এবারই প্রথম সেমিনারের আয়োজন করেছে। আগামীতে আরও ব্যাপক পরিসরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কথা ব্যক্ত করেন।

 

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ড. জেসমিন বুলি, ওস্তাদ মুন্‌শী রইস উদ্দীনের জীবনের বিভিন্ন দিক নিপুণভাবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংগীতের ইতিহাসে ক্ষণজন্মা যে কজন সংগীত সাধকের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে মুন্‌শী রইস উদ্দীন অন্যতম। ১৯০১ সালের ১০ই জানুয়ারি তৎকালীন বৃহত্তর যশোর জেলার বর্তমান মাগুরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতার ধ্রুপদী ও টপ্পাচর্চার কথা শুনে শুনেই নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করেন ভবিষ্যৎ জীবনের ধ্রুপদী সংগীতের এক অনুরাগী হিসেবে। এই শিল্পের প্রতি অমোঘ ভালোবাসায় পরবর্তীতে মাগুরা, নড়াইল ও খুলনাতেও সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩৮ সালে ছদ্মনামে আর মুন্সি অর্থাৎ রবীন মুন্সি নামে কলকাতা বেতারে সংগীত পরিবেশন করেন। এছাড়া মুন্সি রইস উদ্দিন উত্তরসুরীদের জন্য ‘আলম পিয়া’ ছদ্ম নামে অসংখ্য রাগভিত্তিক গান সৃষ্টি করেছেন। বেশ কিছু বাণীপ্রধান গান সুর করেছেন, স্বরলিপিও ছেপেছেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়।

আলোচনায় এ এফ এম আসাদুজ্জামান বলেন, উচ্চাঙ্গ সংগীতের ইতিহাস অধ্যয়ন ও ক্রমবিকাশের পটভূমি রচনায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ‘সরল সঙ্গীতসার’ নামে সংগীতগ্রন্থের একটি পান্ডুলিপি প্রণয়ন করেন। সংগীতশিক্ষা পদ্ধতি নামে আরেকটি গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি ও পদ্মাবতী নামে একটি ‘রাগ’ও সৃষ্টি করেন। এই খ্যাতিমান সংগীতজ্ঞ অভিনব শতরাগসহ প্রায় সহস্র গীত বন্দেশ রচনা করেছেন।

আলোচক জনাব মাহমুদ সেলিম বলেন, তিনি সরল সংগীতসার নামে সংগীতগ্রন্থের একটি পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন করেন। তাঁর রচিত শতাধিক রাগে তিনি নিজেই বাংলা বন্দেশ রচনা করেছেন। ‘শতাধিক রাগ নয়, বেশ কয়েকটি তালও সৃষ্টি করেছেন।

প্রধান অতিথির ভাষণে জনাব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সংগীতের ইতিহাসে যে কতিপয় ক্ষণজন্মা পুরুষের নাম নিয়ে গর্ব করা যায় তাদের মধ্যে ওস্তাদ মুনশি রইস উদ্দিন প্রথম সারির এক ব্যক্তিত্ব। সংগীতের ভূবনে অনন্য সৃজনশীলতার সুদীর্ঘ পথ ধরে এই ব্যক্তিত্বের আগমন ঘটে। তাঁর সৃষ্ট কর্ম সংগীত শিক্ষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে।

বিশেষ অতিথির ভাষণে অধ্যাপক ইন্দ্রমোহন রাজবংশী বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকা বেতারে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তিনি দেশের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান বুলবুল ললিতকলা একাডেমির শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে দীর্ঘ দিন এখানকার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষার জন্য ১৯৬০ সালে তাঁর রচিত ‘প্রবেশিকা সংগীত শিক্ষা পদ্ধতি’ গ্রন্থটি টেক্সট বুক বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত ও প্রকাশিত হয়।

সভাপতিত্ব বরেণ্য সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমান বলেন, তিনি স্মরণযোগ্য সুরের ভুবন সৃষ্টিসহ সংগীত জগতের এ গুণী বরেণ্য পুরুষ অসংখ্য শিষ্য ও সংগীতশিল্পী সৃষ্টি করে গেছেন। আধ্যাত্মিক চিন্তা-চেতনার অধিকারী মুন্‌সী রইচ উদ্দিন সংগীতের প্রতি যেমন ছিলেন অনুরক্ত তদ্রূপ ইসলামিক অনুশাসনের জীবনযাপনে পরিপূর্ণ আন্তরিক ও অভ্যস্ত। তার কর্মের মাধ্যমেই তিনি আমাদের মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।

 

Contact Us:

Phone (PABX): +88-02-58614842, +88-02-58614880, 58615012-3
Fax: +88-02-9667381
E-mail: This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.
Web: www.bangladeshmuseum.gov.bd