ঢাকা, ২৭ নভেম্বর ২০১৭। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বিকেল ৩ টায় কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘ভাই গিরিশচন্দ্র সেন : ক্ষণজন্মা পুরুষের পথ চলা’ শীর্ষক স্মৃতিবক্তৃতার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে স্মৃতিবক্তৃতা প্রদান করেন ড. মোহাম্মদ আলী খান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সিনিয়র সচিব ও বিশিষ্ট সংস্কৃতিজন জনাব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন । অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট চিন্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক । স্বাগত ভাষণ দেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব ফয়জুল লতিফ চৌধুরী ।
স্বাগত ভাষণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, এদেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের জীবন এবং কাজ সম্পর্কে আগামী প্রজন্মকে জানাতে হবে যাতে তাঁরা একটি গর্বিতজাতির অংশ হিসেবে নিজেকে বিবেচনা করতে পারে । তিনি আরো বলেন, জাদুঘর ইনট্রানজিবল হেরিটেজ সংরক্ষণের অংশ হিসেবে বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের জীবন নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।
অনুষ্ঠানের মূলবক্তা বিশিষ্ট গবেষক ড. মোহাম্মদ আলী খান ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের জন্ম, বেড়ে উঠা, লেখা পড়া এবং লেখালেখির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, গিরিশচন্দ্র সেন ছিলেন সাদামাটা অথচ একজন বর্ণিল মানুষ । ১৮৩৪ সালে যার জন্ম বর্তমান নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা গ্রামে । তার পিতা মাধব রাম সেন ( রায় ) এবং মাতা জয়কালী দেবী । আট বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হয় । ৭৪ বছরের জীবনে পবিত্র কোরআন এবং হাদিসের অনুবাদ শুধু করেননি তিনি অসংখ্য গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন এবং বহুসংখ্য মৌলিক গ্রন্থের রচয়িতা । অনুবাদক হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে তিনি কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় করেছেন । ১৮৭৬ সালে আরবি ভাষা শেখার জন্য তিনি লখনো যান । মৌলভী এহসান আলীর অধীনে আরবী ও আরবী ব্যাকরণ ও দিওয়ান-ই-হাফিজ শেখেন । পরবর্তীতে ঢাকা ফিরে নলগোলার মৌলভী আলীম উদ্দীন সাহেবের কাছে আরবী সাহিত্য ও আরবী ইতিহাস চর্চা করেন । ১৮৮২ থেকে ১৮৮৬ এই পাঁচ বছর দীর্ঘ পরিশ্রমের পর তিনি পবিত্র কোরআন শরীফ বাংলায় অনুবাদে সক্ষম হন । এজন্য তিনি আজ একজন পণ্ডিত হিসেবে সকলের কাছে সমাদৃত ।
সম্মানিত অতিথি হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, গুণী মানুষের কাছে রাষ্ট্র কিংবা ধর্ম বড় নয় তাঁর কাছে সব থেকে বড় কাজ। এজন্য গিরিশচন্দ্র সেন একজন বড় মানুষ ।
প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ভারত উপমহাদেশে যে কজন চিন্তক নিজ কাজের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন ভাই গিরিশচন্দ্র সেন তাদের মধ্যে অন্যতম । তিনি শুধু একজন অনুবাদক হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেননি, সমাজ পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ।
সভাপতির ভাষণে বিশিষ্ট চিন্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের মতো কিছু ক্ষণজন্মা মানুষ ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল রাষ্ট্রের চিন্তা করেছিলেন । এজন্য তাঁর সময়টাকে বাংলার রেনেসাঁ বললেও ভুল হবে না ।