ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বিকেল ৩টায় কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু'র উপর একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য পদার্থ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অজয় রায়। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইনডেপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর সহযোগী অধ্যাপক ও কথাসাহিত্যিক ড. আহমাদ মোস্তফা কামাল এবং সরকারি হরগঙ্গা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. সফিকুল ইসলাম । অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের অন্যতম সদস্য ও বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শ্রী সমর চন্দ্র পাল ।
ড. আহমাদ মোস্তফা কামাল বলেন, ব্রিটিশশাসিত ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন আশ্চর্যজনক যন্ত্র আবিষ্কার করে বিশ্বে হই চই ফেলে দেন স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু। এই নির্লোভ বিজ্ঞানী তার কাজের জন্য নিজের লাভের কথা চিন্তা না করে জনকল্যাণের নিমিত্ত নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রাখেন। ১৯১৭ সালে উদ্ভিদ-শরীরতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি কলকাতায় ‘‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে এখানে উদ্ভিদ ও কৃষি রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান এবং নৃতত্ত্ব বিষয়ে গবেষণার জন্য উল্লিখিত বিষয়সমূহের বিভাগ খোলা হয়। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র আমৃত্যু এখানে গবেষণাকার্য পরিচালনা করেন।
সরকারি হরগঙ্গা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, নিরহংকারী এই বাঙালী বিজ্ঞানী রেডিও সিগনাল শনাক্তকরণে সেমিকন্ডাক্টরের ব্যবহার বিষয়ে তাঁর করা গবেষণাপত্র পর্যন্ত উন্মুক্ত করে দেন যেন অন্যান্য বিজ্ঞানীগণ এটি নিয়ে গবেষণা করতে পারেন। না হলে আজ গোটাকয়েক পেটেন্টের অধিকারী হতে পারতেন এই মহাত্মা। জগদীশ চন্দ্র বসুই প্রথম প্রমাণ করেন যে প্রাণী ও উদ্ভিদের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত বরেণ্য পদার্থ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অজয় রায় বলেন, স্যার জগদীশ্চন্দ্র বসুর কাজ ছিল মূলত রেডিও মাইক্রোওয়েভ অপটিক্স এর তাত্ত্বিক দিক নিয়ে। অর্থাৎ তিনি তাঁর গবেষণায় এই তরঙ্গের প্রকৃতি ও প্রণালী ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। রেডিও গবেষণায় তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান হচ্ছে তিনিই সর্বপ্রথম রেডিও তরঙ্গ শনাক্ত করতে সেমিকন্ডাক্টর জাংশন ব্যবহার করেন। এখনকার সময়ে ব্যবহৃত অনেক মাইক্রোওয়েভ যন্ত্রাংশের আবিষ্কর্তাও তিনি। তিনি গবেষণা করে দেখিয়েছিলেন যে উদ্ভিদের উপর বিভিন্ন প্রকার বাহ্যিক প্রভাবকের প্রভাবে ইলেক্ট্রন প্রবাহের ঘটনা ঘটতে পারে।
সভাপতির ভাষণে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের অন্যতম সদস্য শ্রী সমর চন্দ্র পাল বলেন, বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর গবেষণা কতটা সত্য এবং বাস্তব, প্রত্যেক বাঙালি মাত্রই তা অনুধাবন করতে সক্ষম। বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে, পুকুরের ধারে, নদীর কূলে কূলে প্রায় সর্বত্র দেখা যায় লজ্জাবতী লতা নামে এক গুল্ম। এ গাছকে ছোঁয়ামাত্রই দেখা যাবে, কীভাবে গাছটি লজ্জায় সব পাতা গুটিয়ে নিচ্ছে। দেখলেই বোঝা যায়, জীবন্ত প্রাণী হচ্ছে এই গুল্মরাজি। এমন কোনো বাংলার ছেলেমেয়ে নেই, যারা লজ্জাবতী লতাকে স্পর্শ করার আনন্দ উপভোগ করেনি। বিজ্ঞানী বসু তার শৈশব ও কৈশোরে লজ্জাবতী গাছের স্পর্শ থেকে প্রথমে অনুভব করেন, বৃক্ষের প্রাণ আছে, তারই গবেষণা করতে গিয়ে প্রমাণ করেছেন একটি বাস্তবতাকে।