ঢাকা, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সকাল ১১টায় কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে নভেরা আহমেদ-এর উপর একক বক্তৃতার আয়োজন করা হয় । অনুষ্ঠানে নভেরা আহমেদ-এর উপর বক্তৃতা প্রদান করেন তাঁর স্বামী গ্রেগোয়া দ্যা ব্রুনস । অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর মহাপরিচালক জনাব ফয়জুল লতিফ চৌধুরী । নভেরার শিল্পকর্ম নিয়ে আলোচনা করেন দৈনিক প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জনাব সাজ্জাদ শরিফ । অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ও স্থপতি কবি রবিউল হুসাইন । অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নেহেরিন মোস্তফা ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে জনাব ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, ৬০এর দশকে নভেরা আহমেদ তার স্থাপত্য রীতি ও বিশেষত্ব নিয়ে আধুনিক শিল্পকলার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। অভিমানী এই শিল্পী দেশত্যাগের পর লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যান। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর তার শিল্পকর্মের বিশেষত্ব নিয়ে প্রদর্শনের আয়োজন করে তাঁকে নতুনভাবে আবিস্কার করে। নভেরা আহমেদের শিল্পকলা সংগ্রহ ও প্রদর্শন জাদুঘরে ধারাবাহিকভাবে চলছে।
অনুষ্ঠানে গ্রেগোয়া দ্যা ব্রুনস বলেন, নভেরা আহমেদ-এর বাবা একজন প্রগতিশীল ব্যক্তি যিনি তার কন্যাদের সুশিক্ষিত করার চেষ্টা করেন । ছোট বেলায় তাঁর চঞ্চলতার জন্য তাকে “বুনো” বলে ডাকা হত বলে জানান গ্রেগোয়া দ্যা ব্রুনস । ছোট বেলা থেকেই নভেরা ভাস্কর্যে আগ্রহী ছিলেন বলে পরবর্তীতে লন্ডনে আইন পড়তে যাওয়ার পর তিনি ভাস্কর্য শিখতেও ভর্তি হন । ব্রিটিশ পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজেকে কখনোই ব্রিটিশ ভাবতেন না। পিতার উৎসাহেই প্রথম মানব প্রতিকৃতি ভাস্কর্য তৈরি করেন তিনি । শহীদ মিনারের স্থাপত্যের নকশার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন নভেরা আহমেদ।
তিনি আরো বলেন, এটি দুঃখ জনক যে, নভেরার বহু শিল্পকর্ম হারিয়ে গেছে। ১৯৭৩ সালে এক মারাত্নক সড়ক দূর্ঘটনার সম্মুখীন হন নভেরা আহমেদ এবং এতে বহুদিন তাঁর শিল্পচর্চা বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে ফ্রান্সে নিজ বাসায় উঠার পর পুনরায় তিনি কাজ শুরু করেন। এ পর্যায়ে তিনি পেইন্টিং চর্চায় মনোযোগী হন। গ্রেগোয়া দ্যা ব্রুনস আরো বলেন, তিনি ছিলেন একজন মহৎ ও সাহসী শিল্পী । তাঁর মৃত্যুর পর গ্রেগোয়া দ্যা ব্রুনস ফ্রান্সে নভেরার কাজের উপর একটি জাদুঘর ও নভেরা ফাউন্ডেশন তৈরি করছেন । বক্তৃতা শেষে গ্রেগোয়া দ্যা ব্রুনস উপস্থিত দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ।
এরপর ফকির আলমগীর নভেরার উপর তপন বাগচীর লেখা একটি গান পরিবেশন করেন।
সভাপতির ভাষণে স্থপতি রবিউল হুসাইন বলেন, নভেরা আহমেদের শিল্পকর্মের বহুমাতৃকতা হৃদয়স্পর্শী ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এই বক্তৃতায়। নভেরা আহমেদ ছিলেন আধুনিক স্থাপত্যের পথিকৃত। তাঁর জীবন ও কর্ম নতুন প্রজন্মকে নতুন ভাবনায় অনুপ্রাণিত করবে।