বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে ‘পল্লীকবি জসীমউদ্‌দীন: জীবন ও সাহিত্যকর্ম’ শীর্ষক সেমিনার।

ঢাকা, ১৪ মার্চ ২০১৮। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘পল্লীকবি জসীমউদ্‌দীন: জীবন ও সাহিত্যকর্ম’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে ।

সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি পুত্র জনাব খুরশীদ আনোয়ার জসীমউদদীন এবং বিশিষ্ট কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী । সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।

সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপনে অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, পল্লীকবি জসীমউদ্‌দীন ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার বাড়ি ছিল একই জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে । বাবার নাম আনসার উদ্দিন মোল্লা। তিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মা আমিনা খাতুন ওরফে রাঙাছুট। ১৯২৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক "কবর" কবিতা নির্বাচিত হওয়ার পর ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে জসীমউদ্দীন (সনদ হাতে) পান । ১৯৩১ থেকে ১৯৩৭ পর্যন্ত, দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে লোকসাহিত্য সংগ্রাহক হিসেবে জসীমউদ্‌দীন কাজ করেন। তিনি ১০,০০০ এরও বেশি লোকসংগীত সংগ্রহ করেছেন, যার কিছু অংশ তার সংগীত সংকলন জারি গান এবং মুর্শিদা গানে স্থান পেয়েছে। তিনি বাংলা লোক সাহিত্যের বিশদ ব্যাখ্যা এবং দর্শন খণ্ড আকারেও লিখে গেছেন। ১৯৩৩ সনে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে রামতনু লাহিড়ী গবেষণা সহকারী পদে যোগ দেন। এরপর ১৯৩৮ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৪৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে এবং তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগে যোগ দেন। ১৯৬২ সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করে গেছেন। ১৯৬৯ সনে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মান সূচক ডি লিট উপাধিতে ভূষিত করেন।

সেমিনারে আলোচক কবি পুত্র জনাব খুরশীদ আনোয়ার জসীমউদ্‌দীন বলেন, বাবা জসীমউদ্‌দীন ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি কবি। তিনি বাংলাদেশে পল্লীকবি হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৬ সালের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর লেখা কবর কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে এক অবিস্মরণীয় অবদান। পুরো নাম মোহাম্মাদ জসীমউদ্দীন মোল্লা হলেও তিনি জসীমউদ্দীন নামেই পরিচিত। নকশী কাঁথার মাঠ ও সোজন বাদিয়ার ঘাট কবির শ্রেষ্ঠ দুইটি রচনা। জসীম উদ্দীনের কবিতা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। জসীমউদ্‌দীন পল্লীর মানুষের সংগ্রামী জীবন-জীবিকার কথা সাহিত্যের পাতায় তুলে ধরে তিনি বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে উঁচু করে রেখেছেন। কলেজে অধ্যয়নরত থাকা অবস্থায়, পরিবার এবং বিয়োগান্ত দৃশ্যে, একদম সাবলীল ভাষায় তিনি বিশেষ আলোচিত কবিতা কবর লিখেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাবস্থায় এই কবিতাটি প্রবেশিকার বাংলা পাঠ্যবইয়ে স্থান পায়।

সেমিনারে আলোচক বিশিষ্ট কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, বাংলা সাহিত্যে কবি জসীমউদ্‌দীনই প্রথম যিনি পল্লীর জনগণের জীবন, সংস্কৃতি, তাদের সুখ-দুঃখ নিয়ে ব্যাপকভাবে কবিতা, নাটক, গান রচনা করে খ্যাতিলাভ করেন। কবি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তখনই তার বিখ্যাত ‘কবর’ কবিতা বাংলা পাঠ্য বইয়ে স্থান পায়। লিখেছেন অসংখ্য গান। তার লেখা জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- আমার সোনার ময়না পাখি, আমার গলার হার খুলে নে, আমার হাড়কালা করলাম রে, আমায় ভাসাইলি রে, আমায় এত রাতে, কেমন তোমার মাতা পিতা, নদীর কূল নাই কিনার নাই রে, ও বন্ধু রঙিলা, রঙিলা নায়ের মাঝি, ও আমার দরদী আগে জানলে, প্রাণ সখিরে ওই কদম্ব তলে বংশি বাজায় কে প্রভৃতি । তার বেশ কয়েকটি নাটকও বাংলা নাটকের ভিড়ে অমর রচনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। লিখেছেন উপন্যাস ও ভ্রমণ কাহিনী।

সেমিনারে সভাপতির ভাষণে ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, পল্লীকবি জসীমউদ্‌দীন বাল্য বয়স থেকেই কাব্যচর্চা শুরু করেন। কবির ১৪ বছর বয়সে নবম শ্রেণিতে থাকাবস্থায় তৎকালীন কল্লোল পত্রিকায় তার একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ রাখালী। এরপর তার ৪৫ টি বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। কবি ১৯৭৬ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি.লিট উপাধি, ১৯৭৬ সালে ২১ শে পদকে ভূষিত হন। এছাড়া পল্লীকবির অমর সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে, নকশী কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, এক পয়সার বাশিঁ, রাখালি, বালুচর প্রভৃতি। জসীমউদ্‌দীন পল্লীর মানুষের সংগ্রামী জীবন-জীবিকার কথা সাহিত্যের কথা বলতেন।

Contact Us:

Phone (PABX): +88-02-58614842, +88-02-58614880, 58615012-3
Fax: +88-02-9667381
E-mail: This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.
Web: www.bangladeshmuseum.gov.bd