ঢাকা, ১৮ মে ২০১৮। ১৮ মে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস । জাদুঘরসমূহের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান International Council of Museums (ICOM) দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে প্রতি বছর একটি করে প্রতিপাদ্য বিষয় করে। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় 'Hyperconnected Museums: New Approaches, New Publics' বা ‘বহুধা সংযুক্ত জাদুঘর: নতুন প্রয়াস, নতুন প্রজন্ম’। এই ধারণাকে উপজীব্য করে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বিকেল ৩টায় কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে শিকড় সন্ধানী গবেষক: ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব হাসানুল হক ইনু এম.পি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. আবদুল মোমিন চৌধুরী এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ড. এনামুল হক। বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক জনাব আলী ইমাম। সেমিনারে সভাপতিত্ব করবেন বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন । শিকড় সন্ধানী গবেষক: ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালীর উপর তথ্যচিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন করেন এবং ভট্টশালীর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক জনাব আলী ইমাম।
সেমিনারে প্রধান অতিথি জনাব হাসানুল হক ইনু এম.পি বলেন, ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রত্নতত্ত্ব্ এবং জাদুঘর চর্চার মাধ্যমে সন্ত্রাস ও মৌলবাদকে প্রতিহত করে আগামী প্রজন্মের কাছে হাজার বছরের গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরতে হবে । তবেই তারা পৃথিবীতে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে ।
প্রবন্ধকার আলী ইমাম তাঁর আলোচনায় বলেন, নলিনীকান্ত ভট্টশালী ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ জাদুঘরবিশারদ, মূর্তিতাত্ত্বিক, প্রত্নতাত্ত্বিক, ইতিহাসবিদ, মুদ্রাতাত্ত্বিক, প্রাচীন হস্তলিপি বিশারদ, পুঁথি সংগ্রাহক, সাহিত্যিক, সর্বোপরি দেশপ্রেমিক বাঙালি গবেষক। ১৯১৩ সালে ঢাকা জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯১৪ সালে প্রথম কিউরেটর নিযুক্ত হন। মৃত্যুর আগে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি এ পদে ছিলেন। নিজে প্রত্নবস্তু সংগ্রহ করতেন, সংরক্ষণ করতেন, ছবি তুলতেন, গবেষণা করতেন, প্রদর্শনী ও প্রকাশনা করতেন।
অধ্যাপক আবদুল মমিন চৌধুরী বলেন, নলিনীকান্ত ভট্টশালীর জীবনে কখনো আর্থিক স্বাচ্ছল্য ছিল না। ১১৩ টাকায় চাকুরী শুরু করেন এবং মৃত্যুকালীন তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল ২০০ টাকা। ঢাকা জাদুঘর তৈরিতে নলিনীকান্তের অবদান অনস্বীকার্য তাঁর মতো বহুবিধ জ্ঞানের অধিকারী মানুষ এখনো বিরল।
জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ড. এনামুল হক বলেন, নলিনীকান্ত ভট্টশালী ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ব্যক্তি। তিনি ছিলেন অত্যন্ত অসাম্প্রদায়িক একজন মানুষ। দূরদর্শী মানুষ ছিলেন নলিনীকান্ত। আরবি মুদ্রা অনুবাদ করার জন্য আরবি শিখেছিলেন তিনি। মানুষ এই পণ্ডিত ব্যক্তিকে ভুলতে বসেছিল। আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবসে এই মহান পন্ডিত ব্যক্তিকে স্মরণ করার জন্য তিনি জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, আগামী প্রজন্ম তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দেশ বিদেশের নানা তথ্য ঘরে বসে জানতে পারছে ফলে তারা জাদুঘর বিমুখ হয়ে পড়ছে ফলে তারা আমাদের গৌরবময় ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারছে এজন্য জাদুঘরকে তথ্যপ্রযুক্তির নানা উপকরণ দিয়ে আরো সমৃদ্ধ করতে হবে। যার মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম জাদুঘর সম্পর্কে আগ্রহী হবে।