ঢাকা, ০৪ আগস্ট ২০১৮। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস ২০১৮ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক সেমিনার, জাদুঘরে সংগৃহীত বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি-নিদর্শন, আলোকচিত্রের মাসব্যাপী বিশেষ প্রদর্শনী, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি এবং তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী। বিকেল ৩:৩০ মিনিটে জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির শিক্ষা-সংস্কৃতির স্বকীয়তা এবং বিকাশ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর এমপি। মূলবক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও বিশিষ্ট লেখক জনাব মফিদুল হক। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জনাব অসীম কুমার উকিল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জনাব গোলাম কুদ্দুছ এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম অয়াহিদুজ্জামান। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব মোঃ আব্দুল মান্নান ইলিয়াস।
অনুষ্ঠানে মাননীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেন, বাঙালির সংস্কৃতি অন্য সকলের থেকে আলাদা। হাজার বছর ধরে এই ভূখণ্ডে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করছে। এ ভূখণ্ডের মানুষ ছিল অসাম্প্রদায়িক কিন্তু কিছু কুচক্রী মানুষ তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। তাদের সাফল্য আসেনি শুধু মাত্র এদেশের মানুষের অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার কারণে। স্বাধীনতার পর দেশের দুরবস্থার সময় যে চিন্তা করেছিলেন তা ছিল অকল্পনীয়। তিনি ভেবেছিলেন চারুশিলপী কারুশিল্পীদের ব্যাপারে। রবীন্দ্র ও নজরুলের প্রতি ছিল তার বিশেষ অনুরাগ। তিনি ছিলেন সাহিত্য-সচেতন একজন মানুষ। সাহিত্যের বই পাওয়া যায় তাঁর সাথে যখন তাকে গ্রেফতার করা হয় তখনও। বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা যখন প্রথমবার স্বাধীন বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন আয়োজনে প্রধান অতিথি হওয়ার জন্য জাতির পিতাকে অনুরোধ করেন তখন তিনি সাথে তিন বিশিষ্ট ব্যক্তি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পল্লীকবি জসীমউদ্দীন ও আবদুল মমিন চৌধুরীকেও আমন্ত্রণ জানাতে বলেন। ১৯৭১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে তার দেওয়া ভাষণে শিক্ষার ব্যাপারে যা বলেছিলেন তা বর্তমান সরকার বাস্তবায়নের কাজ করে চলেছে। ছাত্রদের সাথে স্বাধীনতার পরে সাক্ষাতে তিনি তাদের পড়ালেখা ও কাজ করতে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন ছোট খাট কাজ করে উপার্জন করে পরিবারে সহায়তা করার জন্য।
মুল বক্তব্যে জনাব মফিদুল হক ‘বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি সংস্কৃতির স্বকীয়তা ও বিকাশ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন ১৯৭৫ এ ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে শুধু হত্যাই করেনি তারা চেয়েছিল মানুষের মন থেকে তার নাম মুছে ফেলতে। এক্ষেত্রে তাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। মানুষ তাকে মনে রেখেছে। বর্তমানে তার কাজের স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পাওয়া যাচ্ছে। ৭ মার্চের ভাষণ পেয়েছে ইউনেস্কো স্বীকৃতি। তিনি শিক্ষা ও কর্মের জন্য শহরে এলেও কখনো মন থেকে গ্রামকে মুছে ফেলেননি। হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর কাছ থেকে পেয়েছিলেন রাজনৈতিক দীক্ষা। জাতীয় জাগরণের তিনি পুরোধা হয়ে উঠেন যার দরুন তাকে বহুবার কারাবরণ করা লাগে। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক একজন মানুষ। তিনি দাঙ্গার সময় হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকলের সাহায্য করেছিলেন। হিন্দুদের বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত নিয়েছিলেন তিনি।
আলোচনায় অধ্যাপক ড. এম অয়াহিদুজ্জামান বলেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই আক্রমণ আসে বাংলার শিক্ষা-সংস্কৃতির উপর। এসময় বাঙালিরা সর্বদা প্রতিবাদ করেছে এবং এতে সর্বদা নেতৃত্বে দেখা গিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনী ভাষণে তিনি শিক্ষাখাতে পূঁজি বিনিয়োগ করতে বলেন। সে সময় এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি পাকিস্তান সরকারের অবহেলা তিনি দেখিয়ে দেন। তিনি শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর কথাও বলেন এ ভাষণে। তিনি আইনের দ্বারা সকল বালক-বালিকার প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেন। আমাদের সংস্কৃতি আত্মত্যাগের সংস্কৃতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনে আমরা তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ দেখতে পাই। তিনি সর্বদা আত্মত্যাগ করেছেন এবং এ সময় সর্বদা তাকে সমর্থন করেছেন বঙ্গমাতা।
জনাব গোলাম কুদ্দুছ বলেন, বাঙালি জাতির গোড়া হচ্ছে এর সংস্কৃতি, আর বাংলা সংস্কৃতির মূলে রয়েছে ভাষা। বাংলা ভাষা রাষ্ট্র ভাষা করার জন্য বঙ্গবন্ধু প্রথম স্বাধীন দেশে কারাবরণ করেন। যুক্তফ্রন্টের সরকারের মন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ভাষা আন্দোলনের ২১ দফার কাজ এগিয়ে নেন। এ সময় বঙ্গ সংস্কৃতির অগ্রদূত উপাধি পান বঙ্গবন্ধু। স্বাধীন বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির প্রায় সবকিছুই বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে শুরু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর চারুশিল্পের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা ছিল। ১৯৭২ সালে সোভিয়েত যাওয়ার সময় তিনি শিশূদের আঁকা ছবি নিয়ে যান। বঙ্গবন্ধুর শূরু করা কাজ তারই কন্যা সম্পন্ন করার পথে হাঁটছেন।
সভাপতির ভাষণে জনাব মোঃ আব্দুল মান্নান ইলিয়াস বলেন, শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর মাসব্যাপী সেমিনার ও বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। এই সেমিনার গুলো বঙ্গবন্ধু জানার একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা মাত্র। জাতির জনক যখন মাত্র স্বাধীন বাংলাদেশকে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন তখন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করা হয় স্বপরিবারে। তারা চেষ্টা করে চলে এদেশের অগ্রগতি আটকানোর। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আমরা এতদিনে আরো উন্নতি লাভ করতাম।