ঢাকা, ২৮ আগস্ট ২০১৮। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস ২০১৮ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক সেমিনার, জাদুঘরে সংগৃহীত বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি-নিদর্শন এবং আলোকচিত্রের মাসব্যাপী বিশেষ প্রদর্শনী, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি। অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে বিকেল ৫টায় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও সুশাসন শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব জনাব মো. ইব্রাহিম হোসেন খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ।
স্বাগত ভাষণে জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব আব্দুল মান্নান ইলিয়াস বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। ৭২-এ দেশে ফেরার পরপরই তিনি যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের উন্নয়নের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাঁর সময়কাল ছিল খুবই স্বল্প কিন্তু এই স্বল্প সময়ে তিনি ভিত্তি দাঁড় করিয়েছিলেন বর্তমান বাংলাদেশের। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এই মহান নেতার স্মরণে আগস্ট মাসব্যাপী প্রদর্শনী, সেমিনারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই কার্যক্রমসমূহ দেশের মানুষকে বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে অনেক নতুন তথ্য প্রদান করবে যা আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জনাব মো. ইব্রাহিম হোসেন খান মূল প্রবন্ধে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্থপতি। তাঁর এই বিশেষণটি নিছক বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সংগঠিত করা, নেতৃত্ব দেয়া এবং একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মুক্তিযুদ্ধে সারা দেশে পাকিস্তানী বাহিনীর চালানো নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পর জনসাধারণের কাছে জরুরি মানবিক সাহায্য পৌঁছানো, ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানোর পাশাপাশি একটি স্বাধীন দেশের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ, আইন প্রণয়ন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজটিও তিনি করেছেন। সারা বিশ্বে বাংলাদেশের স্বীকৃতির সাথে একটি মর্যাদাবান জাতি হিসেবে পরিচিত করার কৃতিত্বটিও তাঁর প্রাপ্য। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ নির্মাণ পর্ব একটি অবিচ্ছেদ্য ও অবশ্যপাঠ্য অধ্যায়। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যখন বঙ্গবন্ধু নতুন করে গড়ে তোলার কাজে ব্রতী হন, তখনই দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা ষড়যন্ত্র শুরু করে। এই ষড়যন্ত্র কেবল ব্যক্তি মুজিবের বিরুদ্ধে ছিল না, ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও তাঁর আদর্শের বিরুদ্ধে। দুঃখজনকভাবে ষড়যন্ত্রকারীরা দুই ক্ষেত্রেই সফল হয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে আজ অবধি বঙ্গবন্ধুই একমাত্র নেতা যিনি সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধারণ করতেন। গণতন্ত্রতো সেই তন্ত্র যা গণমানুষের আকাংক্ষার প্রতিফলনকে ধারণ করে। লিংকনের সংজ্ঞাকে যদি আদর্শ হিসেবে নেই, তবে গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের সরকার, জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা, আমরা বঙ্গবন্ধুর শাসনকে ব্যতিক্রমভাবে দেখার সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধুর নির্ভরতা ছিল দেশের আপামর জনগণ। ১৯৭০ এ তিনি জনগণের উপর নির্ভর করেছেন, ১৯৭১ এ তিনি জনগণের উপর নির্ভর করেছেন ৭২-৭৫ পর্যন্ত তিনি জনগণের উপরই নির্ভর করেছিলেন। তার বক্তব্যে দেশের প্রধান হিরো জনগণ। তিনি জনগণকেই সকল সমস্যা সমাধানের প্রত্যক্ষ নিয়ামক হিসেবে দেখেছেন। জনগণের সমস্যা চিহ্নিত করেছেন, সমস্যার কারণ চিহ্নিত করেছেন, সমাধানের পথ বাতলে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু খোলামনের মানুষ ছিলেন, তিনি সমস্যাকে সমস্যা বলেছেন নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সমাস্যাকে চেপে যান নি। সমস্যাকে চেপে গেলে কখনো সমাধান করা সম্ভব নয়।
সভাপতির ভাষণে জনাব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন একটি সুখী-সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তিই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান ও সাধনা। বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তাঁর অসীম সাহসী নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়, তার প্রধান প্রেরণাও ছিলেন তিনি। তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে, তিনি যে সুখী, সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার বাস্তব রূপ দেয়া। এমন একটি দেশ গড়ে তোলা, যেখানে স্বাধীনতার মূল চেতনা বাস্তবায়িত হবে এবং ধর্মগোত্রনির্বিশেষে সব মানুষ সম- অধিকার ভোগ করবে। গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায় এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই সেই কাজটি করা সম্ভব।